শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

পেটে ক্ষুধা নিয়েই বাংলাদেশ জয়

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম
 তিন বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। খেয়ে না খেয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে কামরুল ইসলাম (১০)। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে কামরুল এবার অনুষ্ঠিত আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দীর্ঘ লাফে সারাদেশের মধ্যে প্রথম ও ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয়  হয়েছে।

কামরুলের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে। সে একই এলাকার হরেকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

হৃতদরিদ্র পরিবারের ছেলের এই দেশজয়ের গল্প এলাকার মানুষের মুখেমুখে ফিরছে। কামরুলকে একনজর দেখতে তাদের বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ।

২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় কামরুল সারাদেশের মধ্যে দীর্ঘ লাফে প্রথম ও ১০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান লাভ করে। ২২ মার্চ বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাল্টিপারপাস হলে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে কামরুলদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে গ্রামের তেমন কেউ চেনে না বললেই চলে। যখন বললাম- দীর্ঘ লাফে দেশ সেরা কামরুল, আগে কবেন না ‘লাফ কামরুল’। নামের আগে ‘লাফ’ শব্দটি জুড়ে গেছে কামরুলের। বাড়িতে ঘর বলতে একটা টিনের দোচালা ঝুপড়িঘর। চারশতক জমির ওপর এই ঘরই সম্বল। বাবা অলিয়ার রহমান নারায়ণগঞ্জে কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। মা গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে কামরুল তিন নম্বর। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না।

কামরুলের মা রুপালী বেগম বলেন, ‘অভাবের জন্যি আমার মনিরে পেট ভরে ভাতই দিতি পারিনে। কাপুড় দিতি পারিনে। ঢাকায় খেলতি যাবি তার একজুড়া জুতো ছিল না। তারপরও দেশের মধ্যি প্রথম হইছে। আমার মনি যাতে ভাল খেলে আরো উপরে উঠতি পারে আপনারা এটটু সহযোগিতা করবেন।’

কামরুল ইসলাম বলে, ‘জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড ১৮ ফুট লাফিয়ে দেশ সেরা হয়েছি। খালি পা আর বড় আসরের উপযোগী  প্রশিক্ষণ না থাকায় ১০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় হয়েছি। তা না হলে দৌড়েও প্রথম হতে পারতাম। সহযোগিতা পেলে কামরুল বিকেএসপিতে পড়তে চায়।

হরেকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হুাময়ুন কবির জানান, দৌড়-লাফে কামরুল বরাবরই ভাল। কোন প্রশিক্ষক আর পরিচর্যা ছাড়াই সে গ্রামের মাঠে নদীর চরে একাই অনুশীলন করে। মহম্মদপুর উপজেলা, মাগুরা জেলা ও খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সে এবার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরভ লাভ করেছে। গ্রামের সুপ্ত এই প্রতিভা বিকশিত হলে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবে কামরুল।

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম সিরাজুদ্দোহা বলেন, গ্রামাঞ্চলে কামরুলের মতো অসংখ্য প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে, যারা মূলত সঠিক পরিচর্যা ও সুযোগের অভাবে প্রস্ফূটিত হতে পারছে না। তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কোমলমতি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও নান্দনিক বিকাশে প্রাথমিকের খুদে শিক্ষার্থীদের প্রেরণা দিতে প্রতি বছরের মতো এবারো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় সারাদেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ী খুদে প্রতিযোগীরা ক্রিকেট, বল নিক্ষেপ, দীর্ঘ লাফ, উচ্চ লাফ, মোরগ লড়াই, যেমন খুশি তেমন সাজো, রিলে দৌড়ে অংশ নেয়।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: