৩৭ কোটি টাকা ফেরত দিতে চান কিম অং
স্বদেশসময় বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরির প্রধান
সন্দেহভাজন চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং
অবশেষে ফিলিপাইনের সিনেট রিবন কমিটিতে মুখ খুললেন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থ চুরি করে ফিলিপাইনে নিয়েছে দুজন বিদেশি।এরা হলেন শুহুয়া গাও এবং ডিং জিজে। ফিলিপাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এসব তখ্য জানানো হয়।
মঙ্গলবার সিনেট কমিটির শুনানিতে হাজির হয়ে তিনি বলেন, যে ভুয়া ডকুমেন্ট ব্যবহার করে এই টাকা ফিলিপাইনে নেয়া হয়েছে তাতে আমার কিছু করার ছিল না। ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার কোথা থেকে এসেছে এ বিষয়ে আমি জানি না। দ্বিতীয়ত, ফিলিপাইনে এই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার নিয়ে এসেছেন দুজন বিদেশি। তাদের একজন ফিলিপাইনে মাঝেমধ্যেই আসা যাওয়া করেছেন। তিনি একজন জাঙ্কেট এজেন্ট। তদন্তে সহায়তার জন্য আমি তাদের নাম ও পাসপোর্টের কপি একটি সিল করা খামের মধ্যে সরবরাহ করবো কমিটির কাছে।
শুনানিতে অং দাবি করেন, সোলেয়া ক্যাসিনো রিসোর্টস হোটেলের হিসাবে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৭ কোটি টাকা) আছে। তিনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে ওই অর্থ ফেরত দিতে চান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এখানে উপস্থিত আছেন। তিনি একটি মাধ্যম হতে পারেন। তাঁর মাধ্যমে আমরা অর্থ দিতে পারি।’ তবে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
এটিকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন ব্লু রিবন কমিটির প্রধান তিওফেস্তো গুইনগোনা।
অং রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তিনি আগেই সিনেট শুনানির মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখার বরখাস্তকৃত ম্যানেজার মায়া সান্তোস-দেগুইতো ভুয়া একাউন্ট খুলেছেন চুরি করা ওই অর্থ নেয়ার জন্য এবং তা উত্তোলনের জন্য।
তবে এর আগে মায়া দেগুইতো বলেছিলেন, কিম অং মাত্র একজন বিদেশিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার কাছে একটি একাউন্ট খোলার জন্য। এ বিষয়ে তিনি দেগুইতোর সহায়তা চান। সেখানে দেগুইতো দুজন বিদেশির কথা বলেননি।
দেগুইতো আরো বলেছেন, কিম অংই তার কাছে ৫ জনকে পাঠায় একাউন্ট খোলার জন্য। পরে এসব একাউন্টধারীরাই ওই চুরি করা অর্থ পায়। এ বিষয়ে কিম অং বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা ছাড়ের সকল দায় দায়িত্ব মায়া সান্তোস-দেগুইতোর।
রিবন কমিটির শুনানিতে মায়া সান্তোস-দেগুইতোর দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ জালিয়াতিতে কিম অংয়ের নাম আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ওই ব্যাংকেরই চারটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। তবে সিনেট কমিটির শুনানিতে ওই চার অ্যাকাউন্টের মালিককে তলবের জন্য নাম-ঠিকানা খুঁজলে দেখা যায় সেগুলো ভুয়া।
ব্লু রিবন কমিটির সদস্য সিনেটর সের্গিও ওসমেনাকে উদ্ধৃত করে ইনকোয়ারার এর আগে জানিয়েছিল, কিম অংই ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো খুলতে বলেছিলেন দেগুইকে। ফিলরেম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ডলার ভাঙানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন।
১৫ বছর আগেও কিম অং একবার সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন বলে ফিলিপাইন ভিত্তিক এবিএস-সিবিএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে সময় ৩৯ বছর বয়সী অংকে ডাকা হয়েছিল। এক সিনেটরের সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ।
বিএস-সিবিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর বয়সে চীন থেকে ফিলিপিন্সে আসেন অং। কলেজের ছাত্র থাকাকালে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজে যোগ দেন।
পরে নিজেই একজন ব্যবসায়ী বনে যান এবং পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
কিম অংয়ের সঙ্গে মায়া সান্তোস-দেগিতোকেও মঙ্গলবারের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে।
0 coment rios: