বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৬

ধান-গম নয়, লালশাকের বীজে মগ্ন চাষি


স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:
মেহেরপুরের একটি লাল শাক খেত

 মেহেরপুর জেলার উত্তর অঞ্চলে ব্যাপকহারে লাল শাকের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি অগ্রীম সার, কীটনাশকসহ আবাদ খরচ দিয়ে উচ্চমূল্যে বীজ কিনে নিচ্ছে। মাত্র ৩ মাসের এ ফসলে প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় এলাকার কয়েক হাজার চাষি ধান ও গমের আবাদ বাদ দিয়ে লাল শাকের বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুর। অনুকুল আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার গুণে এ জেলা সবজি আবাদের জেলা হিসেবে বিশেষ পরিচিত। দেশ স্বাধীনের পূর্বেই মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী ও আমঝুপিতে সরকারিভাবে দু’টি বৃহৎ সবজি বীজ উৎপাদন খামার গড়ে উঠে। যা থেকে উৎপন্ন বীজ বাংলাদেশে সবজি বীজের চাহিদার একটি বিরাট অংশ পূরণ করে চলেছে।

এ জেলার মাটির গুণ বিচার করে ‘লাল তীর’ সহ বিভিন্ন বেসরকারি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কয়েকটি ইউনিয়নে বিভিন্ন সবজি বীজ বিশেষ করে লাল শাকের বীজ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তারা চাষিদের অগ্রীম খরচের অর্থও ধরিয়ে দিচ্ছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার রায়পুর, খন্দকারপাড়া, শোলমারী, মনোহরপুর, ফতেপুর, সুবিদপুর, ঝাউবাড়িয়া, তেরঘোরিয়া, কুতুবপুর, রামদাসপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ব্যাপকহারে লাল শাক চাষ হচ্ছে। ওই সব গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ লাল শাকের ক্ষেত। মেহেরপুর থেকে কাথুলী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তার উপর বিভিন্নস্থানে চাষিরা লাল শাকের বীজ শুকাচ্ছেন।

বীজ উৎপাদনের জন্য শোলমারী গ্রামের মাঠে ওই গ্রামের তাহাজুদ্দিন এক বিঘা, আলকুমা ৫ বিঘা, রেজাউল ৪ বিঘা, নয়ন আলী ২ বিঘা এবং একই গ্রামের কবিপাড়ার আমানুল্লাহ ৩ বিঘাসহ গ্রামের চাষিরা প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে লাল শাকের চাষ করেছেন।

তাহাজুদ্দিন ও আমনুল্লাহ জানান, ৯০ থেকে ১০০ দিনের ফসল এটি। এক বিঘা জমিতে লাল শাক চাষ করে বীজ ওঠানো পর্যন্ত চাষ, সার, বিষ ও লেবার খরচ সব মিলিয়ে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। বীজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানির লোকেরা এলাকার চাষিদের আবাদ খরচ বাবদ অগ্রীম টাকা দিয়ে যান। এবছর কোম্পানির লোকেরা বাড়ি থেকে প্রায় ৮ হাজার টাকা মন দরে বীজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবিঘা লাল শাক ক্ষেত থেকে ৮ থেকে ৯ মন বীজ পাওয়া যায়। প্রতিমন লাল শাকের বীজ (আর.এম) ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলতাপেটে জাতের লাল শাকের বীজ বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা মন। অগ্রীম খরচ পেয়ে চাষি যেমন স্বাচ্ছন্দে সবজি বীজ আবাদ করতে পারছেন তেমনি প্রতি বিঘা লাল শাকের বীজ বিক্রি করে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ পাচ্ছেন তারা।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘মেহেরপুর সদর উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে সদর উপজেলার উত্তর অঞ্চলে বীজ উৎপাদনের জন্য অধিকহারে লাল শাকের চাষ হচ্ছে। আবাদকৃত জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮০০ হেক্টর হবে।’

তিনি বলেন, ‘লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি বীজ উৎপাদনে ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণে আমরা চাষিদের উৎসাহিত করি।’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: