রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

ঘুম ভাঙ্গার একটি দুঃস্বপ্ন : ইবনুল সাঈদ রানা


স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আমার মেয়ে নুজহাত রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেছে ভূমিকম্পে মাটির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সে একা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ নেই। রাতেই ঘুম থেকে উঠে ভীষণ কান্না করেছে। সেসময় কান্না থামানোর জন্য তার মা, ভাই রাবিত নানাভাবে শান্তনা দিলেও কাজ হয়নি
সকাল বেলাতেও নুজহাত এর মন ভাল নেই, আতঙ্ক আর আতঙ্ক। সকালে মেয়েকে কিছুটা সময় দেয়ার জন্যই আমি অফিস যাওয়াটা একটু বিলম্ব করলাম। বাসা থেকে বের হয়েই ভিআইপি রাস্তা। এই রাস্তায় প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান প্রধান সেনাপতি, বিচারপতিদের আসা-যাওয়া। খুবই ব্যস্ততম সড়ক। আমাকে কিছু দূর হেঁটে রাস্তার ওপারে যেতে হয়। কিন্তু এমনভাবে ট্রাফিক জ্যাম লেগে আছে যে হাঁটার জায়গা পাচ্ছিলাম না। প্রতিদিনই এমনটা হয়
হাঁটার জন্য ফুটপাত আছে, ফুটপাতের নীচেই ড্রেন। ড্রেনের উপরের বেশ কয়েকটির ঢাকনা নেই। এপাশ-ওপাশ দিয়ে অসংখ্য লোকজন চলাচল করছেন। এর মধ্যেই ফুটপাতের উপর দিয়ে চলছে কিছু মোটরসাইকেল। চালকদের মধ্যে আইনের কোন তোয়াক্কা নেই
ফুটপাতের একপাশে আছে সারি সারি ভাসমান দোকান। তারা দৈনিক টাকা দেয়ার বিনিমিয়ে ব্যবসা করছেন এখানে। ফুটপাতে দোকান বসানোর টাকা কারা নেয় তা প্রকাশ না করলেও কারো কাছেই গোপন নয়
রোদের মধ্যে ভ্যাপসা গরমে অফিসগামী মানুষের সময়ের উৎকণ্ঠা, গাড়িগুলোর তীব্র হর্ন-এর শব্দ, যানজটের কারণে গাড়ির গরম ধোঁয়া যেন চলাচলের রাস্তা নয়, একটা মৃত্যুপুরী। আর এখানে হাজার মানুষের বসবাস
মৌসুমি ফল তরমুজে রং মিশানো পানি, তা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে শিশুসহ অনেকেই। সকল ফলেই নানা ধরনের ফরমালিন ব্যবহার এখন নিয়মিত। ভেজাল ঔষুধের কারণে ২০টি কোম্পানিকে বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়েছে। বিল্ডিং স্থাপনা তৈরিতে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে! টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার প্রলোভন, প্রচলন চলছে। বেকার সমস্য দূরীকরণে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ এখন নিয়মিত রাজনৈতিক চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে
গত ১৭ দিন ঢাকার তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৃষ্টি নেই অনেকদিন। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আজও ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়নি। এদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া
কৃষক ৫০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রয় করছে। যেখানে একজন শ্রমিককে ৮০০ টাকা রোজে কাজ করাতে হচ্ছে। এবার ধানের ফলন ভাল হলেও ফসল ঘরে আনতে কৃষককে লাভের বদলে ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে
টেলিভিশন-পত্রিকার শিরোনাম রাবিতে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে) শিক্ষক খুন, নির্বাচনে সহিংসতা, সরকারের অনীহার কারণেই ঝুলে আছে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০, কৃষি জমি হচ্ছে অকৃষি, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে শত্রুরা। অমানবিক কর্মকাণ্ডের উৎসব চলছে যত্রতত্র
এতসব কিছুর পর অফিসে বসে মনে হচ্ছে আমার মেয়ের ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নটার বাস্তবতা রয়েছে। এখনই ভাবতে হবে আমাদের। সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র যে যেখানে আছে তাদের ভিতর শৃঙ্খলা থাকতে হবে, নিয়ম থাকতে হবে, আইন মানার আগ্রহ থাকতে হবে
আমরা পরিবেশ বুঝি তবে নিজের স্বার্থের বাইরে নয়- এমন মনোভাব পরিহার করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা প্রতিদিন যেটুকু কার্বন নিঃসরণ করছি প্রতিদিন ঠিক সেটুকু অক্সিজেন উৎপন্ন হওয়ার মতো কোন কাজ কি করছি কিনা? আমাদের উত্তপ্ত আবহাওয়ার প্রতিকূলে নিজে কিছু করছি কিনা?
গত ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হলো সারা বিশ্বজুড়ে। গ্রীন মাইন্ড সোস্যাইটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, স্বপ্নের সিড়ি নামক কয়েকটি সংগঠন সড়কের ডিভাইডারে গাছ লাগিয়ে জানান দিয়েছে- আসুন গাছ লাগাই পরিবেশ বাচাই
সম্প্রতি ঢাকায় এক গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে ধানমন্ডি, রমনা উদ্যান-এর তাপমাত্রা মতিঝিল, শাহবাগ নিউ মার্কেট এলাকার চেয়ে / ডিগ্রি কম। তার মানে হচ্ছে যেখানে গাছ আছে, জলাশয় আছে সেখানে তাপমাত্র অনেক কম
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শব্দ দূষণের মাত্রা ঢাকায় নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে দেড়গুণ বেশী। ভয়াবহ শব্দদূষণের হুমকির মুখে রাজধানীবাসী। উল্লেখিত সব বিষয়গুলোতেই আমাদের সৃষ্ট কর্মকাণ্ড জড়িত
সুতরাং আমাদের কল্যাণে আমাদেরকে আরো সতর্ক জীবনযাপন করতে হবে। শহরের প্রতিটি এলাকায় হাঁটার জন্য পরিবেশ উন্মুক্ত রাখতে হবে। শহর তৈরিতে পর্যাপ্ত খোলা ফাঁকা জায়গা রাখা জরুরি। গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে হাঁটার অভ্যাস বাড়াতে হবে। ডায়াবেটিক, হৃদরোগ এবং হাসপাতালগামী না হওয়ার জন্য জীবনাচরণের পরিবর্তন, সংসার-সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবেশের সকল স্তরের জন্যই কল্যাণকর
লেখক: পরিবেশকর্মী


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

২টি মন্তব্য: