বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

‘অন্যায় হত্যাকাণ্ড ধর্মীয়ভাবেও গুরুতর অপরাধ’

‘অন্যায় হত্যাকাণ্ড ধর্মীয়ভাবেও গুরুতর অপরাধ’
স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম: প্রাক্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- অন্যায় হত্যাকাণ্ড শুধু আইনত দণ্ডনীয় নয়, ধর্মীয়ভাবেও এটি গুরুতর অপরাধ।

১৬৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের এক প্যারায় পবিত্র কোরআনের সুরা আল মায়েদার ৩২ ও সুরা নিসার ২৯-৩০ নম্বর আয়াত রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রায় প্রদানকারী কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে প্রথমবারের মতো কোরআনের আয়াতকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে কতটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তা বোঝাতেই এই আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাইলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নির্দেশনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুত, এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমা অতিক্রম করে।’

সুরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু।’

৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর যে সীমালঙ্ঘন করে কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে শিগগিরই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, এটা আল্লাহর পক্ষে ‍খুবই সহজসাধ্য।’

প্রাক্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের স্বাক্ষরের পর ১৬৭ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।

২০০৪ সালে ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ সময় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।

ঘটনার দিন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়ে মাঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আবার অভিযোগ গঠন করা হয়।

বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মাঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। আসামিরা ২০০৯ সালে জেল আপিলও করেন।
 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: