সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

বাজেটে আয়ে দক্ষতা, ব্যয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:

বাজেটে আয়ে দক্ষতা, ব্যয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ
 প্রতিবছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকছে। তাই আসন্ন অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য শুধু কাগজে উচ্চাভিলাসী না করে, বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, প্রতিবছর বড় বাজেট দেওয়া হলেও বছর শেষে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। বাজেট প্রাক্কলন ও সম্পদ জোগানের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক থাকে। বাজেটে রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা আর ব্যয়ে সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
  রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব ধরা হয়। কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই অনুমাননির্ভর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য স্থির করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই বাজেট প্রণয়নে প্রচলিত প্রথা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করে বাস্তবতার আলোকে বাজেট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বাজেট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রবীন অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, বাজেট প্রণয়ন যত সুষ্ঠুই হোক না কেন, বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয় সমস্যা। ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যাবে। যেকোনো প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দের পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আসছে বাজেট চলতি সংশোধনী বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ বেশ বড় বাজেটই আসছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেড়ে যাওয়ায় আসছে বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হবে। রাজস্ব ব্যয় বাস্তবায়নে সরকারকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। তবে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সব সরকারই সমস্যায় পড়েছে। আসছে বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে হচ্ছে।

এখন তা বাস্তবায়নই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। বড় প্রকল্প নিয়ে সার্বিক মূল্যায়ন আরো বাড়ানো এবং আরো আলোচনা হওয়া দরকার বলেও মনে করেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রূপকল্প বাজেট’ না করে তা কার্যকর করা উচিত। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, সুষম বণ্টন ও দারিদ্র্য বিমোচন- এই চারটি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা জরুরি। তাহলে বাজেট জনগণের কল্যাণে আসবে, অন্যথায় সাধারণ জনগণের তা কাজে আসবে না।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, বাজেটে হাজার খানেক প্রকল্পের কথা উল্লেখ না করে নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প রাখা উচিত। অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়ার ফলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাই নির্ধারিত কিছু প্রকল্প রেখে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

বাজেটে আয়ে দক্ষতা, ব্যয়ে সক্ষমতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সন্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সম্প্রতি তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতিবছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকে। যা আর্থিক সুশাসনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি না করে সংশোধিত বাজেটের ওপর ভিত্তি করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

বাজেট কাঠামোর গুণগত মান বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, দুস্থবান্ধব, সংস্কারমূলক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম এমন বাজেট প্রণয়নের প্রয়োজন।

কথা হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশ ও অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির পথে রাখতে হলে বাজেটের আকার বড় করতেই হবে। একই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করতে হবে। আয়-ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবায়নে দক্ষতা ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: