সোমবার, ৯ মে, ২০১৬

তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কোম্পানির অংশীদারত্ব ছাড়তে হবে

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:

তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কোম্পানির অংশীদারত্ব ছাড়তে হবে
 বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারত্ব বাতিল না করলে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০১৬-১৭ : কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস’ এর সহযোগিতায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ফোরাম অ্যাগেইনস্ট টোব্যাকো (উফাত) এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) সম্মিলিতভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আগামী বাজেটে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে আগামী বছরে বর্তমান টোব্যাকো-ট্যাক্স সিস্টেম পুরোপুরি বদলানো এবং স্লাব নির্ভর কর ব্যবস্থা আর না রাখার জন্য এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যা তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিমন্ত্রী জানান, তামাকজাত পণ্যের ওপর ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ২ শতাংশে উন্নীত করা, তামাক পোড়ানোর চুল্লিপ্রতি বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ এবং সিগারেটের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলের বিষয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা কামনা করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারত্ব বাতিলের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। যখন সরকারই বিএটির ১৩ শতাংশের অংশীদার, তখন কোনোভাবেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, বিএটি (ব্রিটিশ অ্যামেরিক্যান টোবাকো) বোর্ড পরিচালকদের আসনেও আছেন আমাদের দেশের মন্ত্রী-সচিবরা। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হলে প্রথমেই বিএটির অংশীদারত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, সিগারেটের ওপর বিদ্যমান স্তরভিত্তিক করকাঠামো বাতিল করতে হবে।

প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন,  তামাকজাত পণ্যে কর বাড়ানো হলে স্বল্প মেয়াদে সরকারের রাজস্ব কমার সম্ভাবনা নেই।

গোল টেবিল বৈঠকে ২০১৬-২০১৭ বাজেটকে সামনে রেখে তামাকপণ্যের ওপর কর আরোপের বিষয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো হলো- সিগারেটের ওপর কর আরোপের জন্য ব্যবহৃত মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিতে হবে। এই মূল্যস্তর প্রথা কর ফাঁকির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি (বিএটি) মধ্যম স্তরের সিগারেট নিম্ন স্তরের দেখিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। কর আরোপে স্তরভিত্তিক প্রথা চালু থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সব ধরনের সিগারেটের ওপর একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে।  বিড়ির ওপর খুচরা মূল্যের ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে। জর্দা এবং গুলের ওপর খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে। আয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির জন্য তামাকপণ্যের মূল্য বাৎসরিক সমন্বয় করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণে তামাকের ওপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা। তামাকের চুল্লিপ্রতি বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ করা। তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা। কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা। কর ফাঁকি রোধে তামাকপণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে কর আরোপ করা। তামাকপণ্যের ওপর ২ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা। এখান থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ব্যয় করা।

গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, মো. নবী নেওয়াজ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, মানস সভাপতি ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের প্রমুখ।
 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: