সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

‘যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন তারা ভণ্ড’

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:

‘যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন তারা ভণ্ড’
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, আসলে তারা ছিলেন একশ ভাগ ভণ্ড।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও কর্মশালা-২০১৬ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ।

সৈয়দ আশরাফ স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘এই যে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা।এই শব্দটা একটা আতঙ্ক। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমরা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত হয়েছিলাম। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটা সফল মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা মাত্র দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলার, তখন সে সুযোগ দেওয়া হয় নাই। আমরা একটা রাজনৈতিক সংগঠনের ষড়যন্ত্রের শিকার….।’

তিনি বলেন, ‘দেশটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিল তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক-বাহকরা। পরবর্তী সময়ে এসে তারা জাসদ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন করেন। আর এখন আমাদের লেজুড়বৃত্তি করে। একজনকে রাষ্ট্রের মন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। এই যে সিদ্ধান্ত, যদি কেউ একবার ভুল করে তার প্রায়শ্চিত্ত কিন্তু সারাজীবনেই করতে হয়। আজ কি চেহারা!আর কি ভয়াবহ অবস্থা সে সময় ছিল!’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশটাকে গড়ে তোলার কাজ না করে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা দেশটাকে আবার ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করল। যারা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় এসেছেন, এখানে ছাত্রলীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন, আপনারা সেই ইতিহাসটাকে কোনোদিন ভুলবেন না। এই যে অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে, নিন। আমাদের আরো নেতা আছে, তাদের কাছেও সেই অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।’

‘কি ভয়ংকর অবস্থা ছিল। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা আজকে একটা সফল রাজনৈতিক দল হতে পারত। এটা একটা বিষয়ে শিক্ষা দেয়- হঠকারিরা কোনোদিনও কোন কনস্ট্রাকটিভ (গঠনমূলক) কাজ করতে পারে না। অতি বিপ্লবী-প্রতি বিপ্লবীরা হল সবচেয়ে বেশি রিঅ্যাকশনিস্ট। আমার দেখা আছে, আমার ছাত্রবন্ধুরা যারা কমিউনিস্ট পার্টি করত, আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনে বসে চা খাইতাম, তখন তারা যেত তৎকালীন শেরাটন হোটেলে ওয়াইন খাওয়ার জন্য। এগুলো আমাদের চোখে দেখা, কারো কাছে শোনা নয়। তখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিন্নাহ হলের ছাত্র (বর্তমান সূর্যসেন হল)। অনেককেই আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। হঠকারিরা কোনো সময়ে কনস্ট্রাকটিভ না এবং তারা ভণ্ড,’ বলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘আজকের ছাত্রলীগ আর ওই সময়ের ছাত্রলীগ এক না।… মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা, সেটাকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা সম্পূর্ণভাবে সুপরিকল্পিতভাবে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- বাংলাদেশ যেন কোনোদিনই একটি কার্যকরী রাষ্ট্র হতে না পারে। আজকের এই ইতিহাসটা আপনাদের বললাম। আপনারা হয়ত জানেন না। আমরাও কিন্তু এই ইতিহাসকে কোনোদিন ভুলতে রাজি হইনি। ইট ইজ এ পার্ট অব হিস্টোরি।কীভাবে ষড়যন্ত্র করে একটা সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যদি তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার সমস্ত পরিবেশ যদি সৃষ্টি না করত, তাহলে আজকের বাংলাদেশ একটা ভিন্ন বাংলাদেশ হতো।’

আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস তুলে ধরে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অনেকদিন পরে জননেত্রী শেখ হাসিনা আস্তে আস্তে দলকে সংগঠিত করেন। নির্বাচনে জয়লাভ করলেন। আজকে যদি বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতেন, দেশটা আগেই একটা অগ্রসরকামী দেশ হতো।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সবসময় আপনারা একটা দিকে লক্ষ্য রাখবেন। হঠকারিতা এবং হঠকারিদের কোনোদিনও প্রশ্রয় দেবেন না। যারা বিপ্লব বিপ্লব বলে, তারা কোনোদিনও বিপ্লব করতে পারে না। যারা বড় বড় কথা বলে, তাদের সাহস কিন্তু অত্যন্ত কম। আপনাদের লেখাপড়া শেষ করতে হবে। আগামী দিনের নেতৃত্বে গ্রহণের জন্য জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। আমি সৈয়দ আশরাফ যেমন সারাজীবন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হব না। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারাও সারাজীবন দলের নেতা থাকবেন না। আপনাদের মধ্য থেকেই এই নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আপনাদের তৈরি হতে হবে, তৈরি করতে হবে।’

বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অতীতের শিক্ষার্থীরা এক নয়, দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনেক পশ্চাৎপদ ছিলাম। আমাদের মোবাইল ছিল না। টেলিভিশন ছিল না। ক্যামেরা ছিল না। সেলফি ছিল না। এখন বিশ্বটা এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের সহযোগিতায় দেশকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার পক্ষে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়ত সম্ভব হবে না। এই দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ কায়েম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ছাত্ররাজনীতির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রাক্তন এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি একটি বিশাল আকার সারা বিশ্বে। একসময় ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল স্টুডেন্টস একটা বিশাল ছাত্র সংগঠন ছিল। এখন একজনও নেই। খুঁজলেও পাওয়া যায় না। একসময় তারা রাজনীতি করেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেছে। সেই বিষয়গুলো কিন্তু এখন আর নেই। আমাদের দেশেও ষাটের দশকে ছাত্ররাজনীতি ছিল। সত্তর দশকও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরেও ছিল। এখন কিন্তু ছাত্ররাজনীতির সেই গ্লোরিটা নেই। এখন আপনাদের শিক্ষিত হতে হবে। আপনাদের মেধাকে জাতির জন্য প্রয়োগ করতে হবে।’

বর্ধিত সভায় ছাত্রলীগ নেতাদের আগাম ঈদের শুভেচ্ছাও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমানের সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইসহাক আলী খান পান্না, লিয়াকত শিকদার, সুজিত রায় নন্দী, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: