সোমবার, ৬ জুন, ২০১৬

মাহে রমজান, পবিত্র আল-কুরআন নাজিলের মাস : রহমত ও বরকতের মাস



স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:

 


আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা : ১৮৪)
রমজান মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহ র রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল (আ:) রাসূল (সাঃ)-কে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং রাসূল (সাঃ) -ও তাকে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দুবার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহিহ মুসলিমের হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত।
যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম (সাঃ) অতিশয় আনন্দিত হতেন, তাঁর সাহাবাদের বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফযীলত বর্ণনা করে বলতেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। (নাসায়ী)
 আমাদের কর্তব্য আল্লাহ র এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফযীলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যানকর কাজে নিয়োজিত থাকা। সহি নিয়তে রোজা পালনের সাথে সব সময় দোয়া, তাছবীহ, কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকতে হবে।
ইনশাল্লাহ রহমতের এই মাস রমজানে আমরা সকল ওয়াক্তের ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় করবো এবং তারাবীহসহ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সর্বত্তোম চেষ্টা করবো এবং যতো বেশী পারা যায় কুরআন তেলাওয়াত করবো।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব । [সহীহ মুসলিম]
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, কুরআনকে আঁকড়ে ধরো , তাহলে কখনো বিপথগামী হবেনা। [মিশকাত]
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে আল্লাহর কিতাবের পথ ধরে সে দুনিয়াতে বিপথগামী হয়না এবং পরকালে হয়না দুর্ভাগা । [মিশকাত]
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের সম্মানিত লোক হলো কুরআনের বাহক আর রাতের সাথীরা। [বায়হাকী]
 
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কুরআন উচ্চস্বরে পাঠকারী প্রকাশ্যে দান-খয়রাতকারীর অনুরূপ এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মত। [কিতাবুস সালাত]
হযরত উম্মে হাবীবা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দৈনিক বার রাকাত নফল/সুন্নাত নামায আদায় করবে- এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশতের মধ্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। [কিতাবুস সালাত](হাদীস নং-১২৫০)
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন কুরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি তা পাঠ করতে থাক এবং উপরে চড়তে (উঠতে) থাক। তুমি তাকে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে থাক, যেরূপ তুমি দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা তোমার সর্বশেষ বসবাসের স্থান (জান্নাত) ঐটিই যেখানে তোমার কুরআনের আয়াত শেষ হবে।  [কিতাবুস সালাত](হাদীস নং-১৪৬৪)
আয়েশা (রা:) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং কুরআনে অভিজ্ঞও- সে ব্যক্তি অতি সম্মানিত ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠের সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে পড়ে, তার জন্য দুটি বিনিময় অবধারিত। [কিতাবুস সালাত](হাদীস নং-১৪৫৪)
আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা সাধ্যানুযায়ী আমল কর। কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কোন আমলকে বন্ধ করেন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরাই তা বন্ধ কর। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট ঐ আমলই অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত আদায় করা হয়ে থাকে, যদিও পরিমাণে তা কম হয়। তিনি রাসুল (সাঃ) যখন কোন আমল শুরু করতেন, তখন তা নিয়মিতভাবে আদায় করতেন।  [কিতাবুস সালাত](হাদীস নং-১৩৬৮)
রহমতের এই মাস রমজানে সহি নিয়তে রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের সকলেরই উচিত বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা ও মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করা এবং বেশী বেশী দান করা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহি নিয়তে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: