স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:
জিতানের স্বামীর মুঠোফোনে জিনাতের ছবি
জিনাত রফিক। বয়স ১৮ বছর। পাকিস্তানের লাহোরের এই তরুণী পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করায় তাকে হত্যা করে তার পরিবার। মেয়ে জিনাতকে হত্যার অভিযোগে তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানের লাহোরে জিনাত রফিকের স্বামী হাসান খানের পরিবারের লোকজন তার দাফন সম্পন্ন করে। জিনাতের পরিবারের কেউ তার মরদেহ নিতে না আসায় হাসান খানের পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।
হাসান খানের দাবি, তার শাশুড়ি তাদের বিয়ে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিনাতকে বাড়িতে নিয়ে যান।
বুধবার পাকিস্তানের লাহোরে জিনাতের মাকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করায় মায়ের হাতে মেয়ের মৃত্যুর এ ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানে তুমুল বিতর্ক চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জিনাত রফিকের দেহে নির্যাতনের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে বিছানার সঙ্গে বেঁধে ডিজেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, বিয়ে মেনে নেওয়ার লোভ দেখিয়ে জিনাতকে স্বামীর কাছ থেকে বাড়িতে ডেকে আনেন তার মা। পরে তাকে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানে রক্ষণশীল হিন্দু-মুসলিম পরিবারের কোনো সদস্য পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করলে ছেলেমেয়েদের ওপর, বিশেষ করে মেয়েদের ওপর সাংঘাতিক নির্যাতন চালানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রাণ নিয়ে নিতে দ্বিধা করে না তারা।
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদের কাছে মুরে এলাকায় বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এক স্কুলশিক্ষিকাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় উত্যক্তকারী। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে অ্যাবোটাবাদের কাছে আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এক বন্ধবীকে বিয়েতে সহযোগিতা করায় নিজের মেয়েকে হত্যার নির্দেশ দেন মেয়েটির মা।
এদিকে জিনাত রফিকের মৃত্যু নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। পুলিশ এখন জানার চেষ্টা করছে, জিনাতের গায়ে আগুন লাগানোর আগে তিনি বেঁচে ছিলেন, না কি মৃত অবস্থায় তার দেহে আগুন দেওয়া হয়।
এক সপ্তাহ আগে আদালতে গিয়ে পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেন জিনাত রফিক। পরে তার বাবা-মা জিনাতের স্বামীর বাড়িতে যান। জিনাতকে তারা প্রতিশ্রুতি দেন, ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন মেনে আবার তাদের বিয়ে দেওয়া হবে। এ লোভ দিয়ে জিনাতকে তাদের সঙ্গে নিয়ে আসেন।
পাকিস্তান ও ভারতে পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করলে তাদের শাস্তি পেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মেয়েদের হত্যা করে তাদের পারিবার। বিষয়টিকে ‘অনার কিলিং’ বলা হয়। অনার কিলিংয়ের উদ্দেশ্য থাকে পরিবার ও বংশ পরম্পরার ঐতিহ্য রক্ষা করা। এসব রক্ষণশীল পরিবারে নিজের পছন্দমতো ছেলেকে বিয়ে করা ‘পাপ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
0 coment rios: