মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

সোনালী ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:
সোনালী ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত ব্যাংকটির ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ কার্যক্রমের ২০০৯-১০ অর্থবছরের হিসেবের ওপর বাংলাদেশের মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের উপস্থাপিত বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়মের এসব চিত্র উঠে আসে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে মুন্নু ফেব্রিক্সকে প্রকল্প ঋণ দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের ক্ষতি হয় ১৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্লেজ ঋণের ঘাটতি মালামালের মূল্য নগদে আদায় ছাড়াই আসল ও সুদসহ বারবার ব্লক ঋণে রূপান্তর এবং প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে পুনঃতফসিলিকরণ ও পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করে পুনরায় সিসি প্লেজ ঋণ নবায়নের কারণে ব্যাংকের বড় অংকের অর্থ লোকসান হয়।
এমনকি ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ থাকা গ্রাহকের সম্পদ ও মালামাল পরিচালনা বোর্ড কিংবা উচ্চপদস্থদের না জানিয়ে গোপনে বিক্রি করে দিয়েও বড় অংকের অর্থের ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যাংকটি। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ কার্যক্রমের ২০০৯-১০ অর্থবছরের হিসেবের ওপর বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের উপস্থাপিত বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।

আলোচনা শেষে কমিটির পক্ষ থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার এবং অনধিক ৬০দিনের মধ্যে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে অডিট অফিসের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্লেজ ঋণের ঘাটতি মালামালের মূল্য নগদে আদায় ছাড়াই আসল ও সুদসহ বারবার ব্লক ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে পুনঃতফসিলিকরণ ও পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করে পুনরায় সিসি প্লেজ ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের ৬১ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অমান্য করে যেসব কর্মকর্তা ঋণ পুনঃতফসিল করার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অপসারন, ঋণ গ্রহীতার জমাকৃত অর্থ ব্যাংকের হিসেবে নগদায়ন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তত্বাবধান জোরদার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যাতে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পুনরায় ঋণ গ্রহণ না করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করার সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনে ব্যাংকের দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করে বলা হয়েছে, কারো অনুমতি ছাড়াই দায়বদ্ধ মালামাল বিক্রয় এবং ঋণ হিসেবে জমা না করে ব্যাংকের ২০ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। ব্যাংকের প্লেজ ঋণের দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অগোচরে বিক্রয় করা সত্ত্বেও এবং অনাদায়ী পিএসসি প্লেজ ঋণের টাকা আদায় না হওয়ার পরও ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ ও নবায়ন করার মাধ্যমে ব্যাংকের ক্ষতি করা হয়েছে ১১ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮১ টাকা। স্টকলটকৃত মালামাল রপ্তানির  মাধ্যমে সমন্বয়ের শর্ত আরোপ না করে মেয়াদী ঋণে পরিণত এবং ঘাটতি মালামালের মূল্য আদায় না করে পুনঃতফসিলিকরণ ও ঋণ পরিশোধের কিস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ব্যাংকের ক্ষতি করা হয়েছে ৭০ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ৮১৩ টাকা এবং শাখা ব্যবস্থাপক ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে মেসার্স এইচ এস ফ্যাশন লিমিটেড ও এর সহযোগি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং মালামাল রপ্তানি না করে ঋণের টাকা অন্যখাতে বিনিয়োগ ও অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলিকরণ সত্ত্বেও দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের আরো ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বেশকিছু অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, স্টকলটকৃত মালামালের মূল্য ঋণ হিসেবে জমাকরণে ব্যর্থ ও পুনঃতফসিলিকরণ কার্যকর না হওয়া সত্ত্বেও ডাউনপেমেন্ট আদায় না করে পুনঃতফসিলিকরণ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। পুনঃতফসিলিকরণ ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপনের সুবিধার প্রেক্ষিতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি আমদানিকৃত মালামাল রপ্তানি না করায় ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ ২ হাজার ৬৩৭ টাকা, রপ্তানি সামর্থ যাচাই না করে মেসার্স নাসের গার্মেন্টস ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং রপ্তানি ব্যর্থতাজনিত  কারণে সৃষ্ট ফোর্সডলোনসহ প্রকল্প ঋণ, সিসি হাইপো ও এলটিআর ঋণের দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ টাকা, পুনঃতফসিলিকরণ সত্বেও প্রকল্প ঋণের নিয়মিত কিস্তির টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পরও আমদানি এলসি স্থাপন করে আরো দায় সৃষ্টি এবং প্রকল্প বন্ধ থাকায় মেসার্স মুন্নু ফেব্রিক্স’র ঋণ বাবদ ব্যাংকের ক্ষতি ১৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপনের মাধ্যমে আমদানিকৃত মালামাল রপ্তানি না করে গ্রাহক বিক্রি করে দেওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পুনঃতফসিলিকরণসহ রপ্তানি ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুনঃতফসিল সুবিধা আর প্রদান না করা ও ঋণের দায় পরিশোধের অঙ্গীকারনামা থাকা সত্ত্বেও পুনঃতফসিলিকরণের শর্ত লংঘন করে অনিয়মিতভাবে একাধিকবার পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা অনুমোদন করায় এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের ১৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. অফসারুল আমীন, বেগম রেবেকা মমিন, মইনউদ্দীন খান বাদল, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এবং সিএন্ডএজি মাসুদ আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: