রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ১১তম ‘এশিয়া- ইউরোপ মিটিং’ (আসেম) সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে তিনি ১৪ থেকে ১৬ জুলাই মঙ্গোলিয়া সফর করেন। এই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদে অর্থদাতা, মদদদাতা, প্রশিক্ষণদাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আসেম সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। কেন উচ্চবিত্ত শিক্ষিতরা এ পথে আসছে তাদেরকে সকলে মিলে খোঁজে বের করতে হবে। তথ্য বিনিময় করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সন্ত্রাসী হামলার কারণে বিনিয়োগে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ব্যাপারে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) আমায় আশ্বস্ত করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে মানুষ মনে করত দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই বোধ হয় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, যারা ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছে তারা যুক্ত।
যাদের কোনো অভাব নেই, যারা ভালো খায়, ভালো পরে তারাই এখন জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। কোনো কিছুরই অপ্রাপ্তি যাদের থাকে না, তারা কেন এটা করছে, এর যৌক্তিকতা কী? কারা তাদের পেছন থেকে উসকানি দিচ্ছে? এই তরুণদের অস্ত্র দিচ্ছে কারা, অর্থ যোগান দিচ্ছে কারা, এই তথ্য সম্মিলিতভাবে খুঁজে বের করাতে হবে।’ ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষ খুন করলে বেহেস্তের দরজা খোলে না।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরও হামলা হতে পারে। তার এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সরকারের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কি না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘একবার যখন ঘটেছে, এরা তো বসে থাকবে না, ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। যাদের ঐক্য হওয়ার দরকার তাদের হয়েছে। যারা ‘সর্প হইয়া দংশন করে আর ওঝা হয়ে ঝাড়ে’ তাদের কথা আলাদা।
শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হিন্দু ছেলে-মেয়েরাও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এসেছে। তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে। পানি দিয়ে মুসল্লিদের সহযোগিতা করেছে। এতে কি বোঝা যায় না যে, হিন্দু-মুসলিম সকলে মিলে একটা অসাম্প্রদায়িক জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে?’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জঙ্গি প্রতিরোধে গণকমিটি গঠন করা হচ্ছে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে, আগুন-বোমা সন্ত্রাস করছে, যুদ্ধাপরাধ করেছে তারা কী বলছে, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু দেশের যেসব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে সত্যিকার অর্থেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে তাদের ঐক্য গড়ে উঠেছে।’
সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন তথ্য আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যে তথ্য আসছে, তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো। তদন্ত শেষে সবকিছু বুঝতে পারবেন সবাই।’ তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি না করার জন্যও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জঙ্গিবাদ বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথাও আসেম সম্মেলনে বলেছেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসেম সম্মেলনে অংশ নিয়ে আমি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা বিশ্বনেতাদের জানিয়েছি। কেবল তাই নয়, বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে মদদদাতা, অর্থদাতা ও প্রশিক্ষণদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
0 coment rios: