স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার সচিবালয়ে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা শীর্ষক জরিপের ভিত্তিতে শহরের তালিকায় এবার ঢাকা ১৩৭তম অবস্থানে।
এ বিষয়টি তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপোলি ও নাইজেরিয়ার লাগোস- এই তিনটি সিটির পর আমরা (ঢাকা) মোস্ট আনলিভ্যাবল সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (বিশ্বে বসবাসের অনুপযুক্ত শহর)।’
তিনি আরো বলেন, এই অপরিচ্ছন্ন ও অপরিকল্পিত ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করে সুন্দর ও বসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার সিটি দুই উদ্যোগী মেয়র এগিয়ে আসলে ঢাকা সিটিকে সুন্দর শহরে পরিণত করা সম্ভব।
আরএসটিপি প্রণয়নের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। যেকোনো দপ্তর বা উন্নয়ন সংস্থা শুধুমাত্র সংশোধিত এসটিপির আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারবে। সংশোধিত এসটিপিতে সুপারিশকৃত প্রকল্পের বাইরে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার গণপরিবহন ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে, কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আর কিছু প্রকল্পকাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আরএসটিপিতে যেসব প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে তা হলো- পাঁচটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) রুট নির্মাণ, দুটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি সড়ক নির্মাণ, ইনার, মিডল এবং আউটার নামে তিনটি রিং রোড নির্মাণ, ইনার ও আউটার রিং রোডকে সংযোগকারী ৮টি রেডিয়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। এসব সড়ক হলো : ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-টঙ্গী-ঘোড়াশাল, ঢাকা-পূর্বাচল-ভূলতা, ঢাকা-কাঁচপুর-মেঘনা সেতু, ঢাকা-সাইনবোর্ড-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-ঝিলমিল-ইকুরিয়া, ঢাকা-আমিনবাজার-সাভার, ঢাকা-আশুলিয়া-ডিইপিজেড।
আরএসপিতে ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব বা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধান ট্রান্সপোর্টেশন হাবগুলোর মধ্যে থাকবে হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, মহাখালী বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গাবতলী সার্কুলার ওয়াটারওয়ে স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।’
তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার জলপথ উন্নয়ন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও ট্রাফিক সেফটি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাসরুট সমন্বয়করণ, বাস কোম্পানি গঠন, রিলোকেশন অব বাস টার্মিনালগুলোর স্থানান্তরসহ বাস পরিবহন ব্যবস্থা পুনর্গঠনের কথাও পরিকল্পনায় রয়েছে।
‘গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিআরটি, মেট্রোরেল রুট-৬, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং পিপিপি ভিত্তিক ঢাকা বাইপাস মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫, এয়াপোর্ট হতে ঝিলমিল পর্যন্ত বিআরটি রুট, তেরমুখ-বিরুলিয়া-গাবতলী-সদরঘাট-চাষাঢ়া-শিমরাইল-ডেমরা পর্যন্ত ঢাকা সার্কুলার রুটের দ্বিতীয় অংশ ও ডেমরা-তেরমুখ ইস্টার্ন বাইপাস এবং বাস সেক্টর পুনর্গঠনের কাজ অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে, জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংশোধিত এসটিপিতে দুটি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার আগেই মিডল অথবা আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশের তথা মুন্সীগঞ্জ জেলার বাউরভিটা হতে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাইকারটেক পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ।
‘মেট্রোরেল রুট-১ এর নির্মাণ কাজ শুরুর আগে বালু নদীর পূর্ব পাড় থেকে ঢাকা বাইপাসের পশ্চিম পাড়ের মধ্যবর্তী অংশের মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় মেট্রোরেল প্রকল্পের নিহত সাত পরামর্শকের জায়গায় নতুন সাত পরামর্শক যুক্ত হয়েছেন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
সোমবার ‘সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা, ২০১৫-২০৩৫’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এম এন ছিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।