সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬

জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়ার প্রত্যয়

 স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম:

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছেএতে জঙ্গিবাদ রুখতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং হাতে হাত রেখে জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মানববন্ধন শেষে র‌্যালি ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধনে ঢাকাসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন ।

রাজধানী ঢাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণপুর, মিরপুর, বনানী ও উত্তরাসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্টে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আইন দিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যে এখানে মানববন্ধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে স্কুলভিত্তিক কমিটি গঠন করেও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম চালানো হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর রাখুন। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, সন্তানদের প্রতি নজর রাখুন। নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

বনানীর সড়কে কর্মসূচিতে অংশ নেন অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে আজকে আমাদের এই মানববন্ধন। এ ছাড়া কুচক্রীদের দেখানো পথ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে।’

শিক্ষার্থীরা মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, আর বাকিটা সময় তারা বাসা-বাড়িতেই থাকে। তাই শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সজাগ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের এই দেশে যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এবং ইন্ধনদাতা, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়া অসম্ভব নয়। শুধু দরকার ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।’ যারা এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ,তিনি তাদের অমানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন।


রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্মসূচিতে অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, ছোট থেকেই তারা ছেলেমেয়েদের সচেতন করতে চান। জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে সমর্থন জানাতেই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।


সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন,  ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের  সার্বিক এ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে কতিপয় কুচক্রি মহল দেশকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ১৯৭১ এ বাঙালিরা সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, ঠিক সেভাবেই জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করা হবে। জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ ছাড়া বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, আলেকান্দা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজসহ বরিশাল নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিলিছ এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাদী চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, ও কর্মচারীরা । মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) : বেলা সাড়ে  ১১টার দিকে কুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ক্যাম্পাসের অডিটরিয়াম ও  ‘দুর্বার বাংলা’র পাদদেশে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন, র্যা লি ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

এ ছাড়া নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সামনে র‌্যালি ও মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।


একইভাবে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে নর্দান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী মানববন্ধন করেন।

সরকারি বিএল কলেজ, সরকারি আযমখান কমার্স কলেজ, সরকারি বয়রা মহিলা কলেজ, সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ এবং খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে জঙ্গি ও  সন্ত্রাসবাদবিরোধী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) : সকাল সাড়ে ১০টায় সিনেট ভবনের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন শুরু হয়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘জঙ্গিবাদ এখন জাতীয় সংকট, রাষ্ট্রীয় সমস্যা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে এ জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করতে হবে।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) : সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে জঙ্গিবাদবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ভাইস চ্যান্সেলর ড. আমিনুল হক ভুঁইয়া, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. রাশেদ তালুকদারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে একটি র‌্যালি বের করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) : ডুয়েটে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জঙ্গিবাদবিরোধী মানববন্ধন ও র্যা লি অনুষ্ঠিত হয়। ডুয়েট ক্যাম্পাসের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন ও র‌্যালিতে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে ডুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি গণেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফজলুল হাসান সিদ্দিকী ও রেজিস্ট্রার ড. অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) :  দুপুরে কাদিরাবাদ সেনানিবাস ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মানববন্ধন করে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি।

এ সময় শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ দেন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এইচ এম শহীদউল্লাহ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) : ইউজিসি চত্বরে আয়োজিত মানবন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য অধ্যাপক শাহ নওয়াজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের স্থান নয়। এটি সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। কতিপয় বিপথগামী ব্যক্তি কর্তৃক দেশের ভাবমূর্তি কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিশেনের সভাপতি ও ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন। কর্মসূচিতে ইউজিসির সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ : বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর নেতৃত্বে ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে কলাবাগান হয়ে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত মানববন্ধন হয়।

ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গিবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির কনভেনর মোর্শেদা চৌধুরী এবং স্বাধীনতা শিক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু।

এ ছাড়া গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, এমইএইচ আরিফ কলেজ, গাজীপুর মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এছাড়া ভোলা, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: