মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সমৃদ্ধির অংশীদার হতে মার্কিন ব্যবসায়ীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম

ফাইল ফটোডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো জোরদার করতে পারস্পরিক মুনাফা ও সমৃদ্ধির পথে ঢাকার সঙ্গে অংশীদার হতে মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ ও একটি আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে এদেশের পোশাকের শুল্ক ও কোটমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি পারস্পরিক মুনাফা ও সমৃদ্ধির পথে আমাদের অংশীদার ও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এ ধরনের লাভজনক অংশীদারিত্ব দুই দেশের বন্ধুত্ব আরো জোরদার করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার নিউ ইয়র্কের হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের(বিসিআইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে। এর মধ্যে আইনের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস, রেমিট্যান্স অব রয়েলিটি, শতভাগ বিদেশি ন্যায্যতা, উদার প্রত্যাহার নীতি এবং লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবসনের সুবিধা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বেসরকারি শ্রমঘন শিল্পের জন্য প্রায় ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুত হয়ে গেছে। এ সময় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ নীতি এবং দ্বৈত কর এড়ানো সংক্রান্ত সম্মেলনে স্বাক্ষর করেছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিশেষত নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, অটোমোবাইল ও হালকা প্রকৌশলী, রাসায়নিক সার, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস ও প্লাস্টিক পণ্য, আইসিটি, নৌসম্পদ অন্বেষণ, পর্যটন, মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ, টেলিযোগাযোগ ও জ্ঞানভিত্তিক উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত।

তিনি বলেন, এসব পণ্যের বেশিরভাগই ৫২টি দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশের সুযোগ পাবে যার ফলে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ, এ শিল্পে আরো বেশি নারীদের নিয়োগ ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি ও একটি আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর মত ৫২টি দেশ বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ৫২টি দেশের মত এ সুযোগ দিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক উচ্চতার দিকে এগুচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাম্প্রতিক সফর এর প্রমাণ। এমনকি আমাদের কৌশলগত সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে আরো বিস্তৃত ও গভীর হচ্ছে। এ ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক দুদেশের  বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব রাখছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এখন পর্যন্ত আমেরিকান কোম্পানিগুলোই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। গত বছর তারা বাংলাদেশে অর্ধ বিলিয়ন ডলার অথবা মোট এফডিআইয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষে রয়েছে। ‘আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর দাঁড়িয়েছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উচ্চ শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ব্যাপারে শর্তারোপের ইস্যুগুলো যদি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় তাহলে এই বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত অন্যান্য দেশের মত সুবিধা পাওয়ার কথা, কিন্তু বাংলাদেশ তা পায় না। এলডিসিভুক্ত অন্যান্য দেশকে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত সংরক্ষণ ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরিবর্তে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ডিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। এমনকি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পর থেকে এই শিল্পে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই নারী এবং তারা দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। তাদের আয় তাদের ক্ষমতায়ন করেছে। এর ফলে এখন তারা পুষ্টিকর ভাল খাবার পাচ্ছে, সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে এবং পরিবারে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাদের ক্ষমতায়ন দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক হয়েছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এবং শিক্ষার হার বাড়ছে।

বিশেষভাবে এই অগ্রগতি সমাজকে প্রগতিশীল করে তুলছে- যা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা সফল করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত সম্প্রসারিত হবে, আরো কর্মসংস্থান হবে, আরো নারীর ক্ষমতায়ন হবে এবং এটি আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর বাংলাদেশে মোট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রথমবারের মতো দুই বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের এই আস্থা দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বাস্তব অবকাঠামো উন্নয়নের সূচক। তাদের আস্থা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা এবং ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার সক্রিয় প্রচেষ্টা।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তার দল সরকার গঠন করার পর বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের গড় দাঁড়ায় ৬.২ শতাংশের বেশি। চলতি বছর তা ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৬৫ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৫.৪৫ শতাংশে রাখা সম্ভব হয়, রপ্তানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এবং রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক মানব উন্নয়ন সূচক দাঁড়ায় ১.৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, এসব অর্জন এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়ক হয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশ। বৈদেশিক সাহায্য এখন বার্ষিক জিডিপির ১.৫ শতাংশ। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রায়শই বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল’।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল সেকুলার গণতান্ত্রিক দেশ। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের নিচে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস, কয়লা, পানি উর্বর জমি এবং দ্রুত বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি রয়েছে এবং এতে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের দূত এবং স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক সহকারি সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল, আমেরিকান টাওয়ার করপোরেশন, ওয়ালমার্ট, মেটলাইফ, বোয়িং, শেভরন করপোরেশন, জিই, কোকা কোলাসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।

তথ্যসূত্র : বাসস
 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: