রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।

নিজস্ব প্রতিবেদক,স্বদেশ সময়: চলতি বছর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ  জাতীয় সম্মেলন করেছে ক্ষমতাসীন দল। সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তো বটেই আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয় গোটা রাজধানীতেই। এই সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে কি না-সেই আলোচনা ছিল আগে থেকেই।
সম্মেলনের দুই সপ্তাহ আগেই শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সভাপতি পদ থেকে তার সরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা। পরে আরও দুই দফা বলেছেন একই কথা। এমনও বলেছেন, ‘৩৫ বছর তো হলো, আর কতো’।
আবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ প্রথম পছন্দ-এমন কথা যখন চাওড় হয়ে গেছে, তখনই ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাবনার গুঞ্জন ছড়ায় জাতীয় সম্মেলন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে। তবে আগের রাতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কোনো গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে চমকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলেন।
দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পর চমকের জন্য জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনে অপেক্ষা করছিলেন রাজনৈতিক সচেতনরা। তবে প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতায় তেমন কোনো আভাসও পায়নি কেউ। তাই বলাবলি হচ্ছিল, দ্বিতীয় দিন হয়ত বিশেষ কোনো চমক হবে।
দ্বিতীয় দিন নেতৃত্ব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর সময় দেয়া বক্তব্যের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলররা সমস্বরে ‘না’ বলে জানিয়ে দেন তারা রাজি নন।
এরপর সাংগঠনিক জেলার নেতাদের বক্তব্য চলাচালেও একাধিক নেতা সভাপতির পদ থেকে সরে না যাওয়ার দাবি জানান। এমনকি গঠনতন্ত্রে আজীবন সভাপতি থাকার বিধান যোগ করারও দাবি জানান।
তবে দলের আগের কমিটি ভেঙে দেয়ার পর শেখ হাসিনা আবারও নতুন সভাপতি নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘সম্মান থাকতেই সবাইকে সরে যাওয়া উচিত’। সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলররা আবার সমস্বরে না বলে তাদের অসম্মতি জানান।
এরপর সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার মতোই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
এই নেতৃত্ব নির্বাচনের পর উপস্থিত কাউন্সিলরদের মধ্যেও বলাবলি হচ্ছিল, চমক কিছুই হলো না। কারণ, শেখ হাসিনা যতই বলুন, এই পদে তাকে ছাড়া আর কোনো বিকল্পের কথা মাথাতেও আনেননি কাউন্সিলররা। আর সাধারণ সম্পাদক পদেও ওবায়দুল কাদেরের নাম দুই দিন ধরে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
কী চমক দিলেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের কাছ থেকে কোনো জবাবই পাওয়া যায়নি। তিনি ধন্যবাদ বলে পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আশরাফ ভাই ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেছেন-এটাকেই চমক হিসেবে ধরে নিতে পারেন।’
অন্য একজন নেতা বলেন, শীর্ষ দুই পদে অনুমিত লোক থাকলেও নতুন কমিটির এখন পর্যন্ত চমক হিসেবে ধরে নেয়া যায় সভাপতিমণ্ডলীতে যশোরের পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্যের নাম অন্তর্ভূক্তি। নিভৃতচারী পীযুষের নাম ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও পরিচিত নয়।
বাংলাদেশের যত ঐতিহাসিক অর্জন, তার প্রায় সবগুলোতেই জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। এ কারণে পছন্দের তো বটেই বিরুদ্ধ রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ ও দলের কাছেও এই দলটির জাতীয় সম্মেলন বরাবর থাকে আগ্রহোদ্দীপক।
তবে সৈয়দ আশরাফ কি একেই চমক হিসেবে বুঝিয়েছিলেন কি না-সে বিষয়েও অবশ্য ওই নেতা কিছু বলেননি। আর বরাবর গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করা আশরাফের কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়ার আশা না করাই আপাতত এক বাস্তবতা।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: