স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম
আদালত বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি।’ তাই এ মামলা থেকে প্রাক্তন এসএনসি-লাভালিন কর্মকর্তাসহ তিন আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন কানাডার ওন্টারিওর আদালত।
শুক্রবার কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানানো হয়। রায়ে অব্যাহতি পাওয়া তিনজন হলেন এসএনসি-লাভালিনের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া।
পত্রিকাটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল। এই ষড়যন্ত্রের তথ্য-প্রমাণ হিসেবে ফোনে আড়ি পেতে ধারণ করা যেসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে আবেদন করা হয়, তা নিছক গালগল্প ও গুজব বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ জোগাতে ফোনে আড়ি পাতা তথ্য (ওয়্যার ট্যাপস) ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২০১১ সালে তিনটি আবেদন করে রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)।
বিচারক ইয়ান নরডেইমার রায়ে জানান, ২০১১ সালে আরসিএমপি ফোনে আড়ি পাতার তথ্য ব্যবহারে যে তিনটি আবেদন করেছিল তা নিয়ে তার ‘গুরুতর উদ্বেগ’ রয়েছে।
বিচারক জন নরডেইমার বলেন, ‘ফোনে আড়ি পাতা তথ্যে অনুমান, গালগল্প ও গুজব ছাড়া আর কিছুই নেই। সেই গুজব বা অনুমানকে সমর্থনকারী ঘটনার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- এমন কোনো কিছুই তদন্তে বের হয়ে আসেনি। যে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে তা শোনা কথা, যা আরো শোনা কথা হাজির করেছে।’
আরসিএমপি প্রাথমিকভাবে এ মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। পরে অভিযোগ থেকে মোহাম্মদ ইসমাইল ও আবুল হাসান চৌধুরী নামের দুজনকে বাদ দেওয়া হয়।
দুর্নীতির এই অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায়। পরে নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার।
দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে অনুরোধ জানায়।
ওই অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি-লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রমেশ শাহ ও প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২০১২ সালে টরন্টোর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে এসএনসি-লাভালিনের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ও ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূঁইয়াকেও এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
সে সময় রমেশ শাহের কাছ থেকে কানাডীয় পুলিশের জব্দ করা একটি ডায়েরি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়, যাতে ‘বাংলাদেশের কাকে কত শতাংশ ঘুষ দেওয়া হবে’ তার সাংকেতিক বিবরণ ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের চাপে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করলেও ২২ মাস পর তদন্তকারীরা বলেন, অভিযোগের কোনো প্রমাণ তারা তদন্তে পাননি।
দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে, তখনকার সেতুসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেন আদালত।
0 coment rios: