শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মুশফিক-মিরাজের দৃঢ়তায় লড়াইয়ে বাংলাদেশ

  স্বদেশসময় টোয়েন্টিফোর ডটকম

শট খেলছেন মুশফিকুর রহিম
 হায়দরাবাদে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ভালোভাবে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ।

স্কোর: বাংলাদেশ ৩২২/৬
ব্যাটিং: মুশফিকুর রহিম (৮২), মেহেদী হাসান মিরাজ (৫১) 
আউট: সাব্বির রহমান (১৬), সাকিব আল হাসান (৮২), মাহমুদউল্লাহ (২৮), মুমিনুল হক (১২), সৌম্য সরকার (১৫), তামিম (২৫)
ভারত: ৬৮৭/৬ (ডিক্লেয়ার)

লড়াইয়ে বাংলাদেশ: হায়দরাবাদে স্বপ্নের মতো সেশন পার করল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে ভালো অবস্থানে থেকে তৃতীয় দিন খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। শেষ সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ৩০ ওভারে ৭৬ রান করেছে সফরকারীরা। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিরাজ ও মুশফিক করেছেন ৮৭ রান।

মুশফিকের ৩০০০: চতুর্থ বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে তিন হাজার রান পূর্ণ করেছেন মুশফিকুর রহিম। এ ল্যান্ডমার্কে পৌঁছতে ৭৮ রান প্রয়োজন ছিল মুশফিকের। ইশান্ত শর্মার বলে দিনের শেষ ওভারে বাউন্ডারিতে বল পাঠিয়ে মাইলফলকে পৌঁছান টাইগার দলপতি। সবার আগে তিন হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন হাবিবুল বাশার সুমন। এরপর তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান এ ক্লাবে নিজেদের নাম লিখান।

মিরাজের অভিষেক হাফ-সেঞ্চুরি: অশ্বিনের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল। মিরাজের কাট শট। ঝড়ো গতিতে বল পয়েন্ট ও কভারের মাঝ দিয়ে গেল বাউন্ডারিতে। মিরাজের মুখে হাসি। বড় কিছু পাওয়ার আনন্দ। সত্যিই তাই, বড় কিছু অর্জন করেছেন ১৯ বছর বয়সি এ ক্রিকেটার। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মেহেদী। ১০২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান মিরাজ। এর আগে ৪ টেস্টে তার রান ছিল মাত্র ২০। ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দ্যূতি ছড়িয়ে মিরাজ নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়।  

মুশফিক-মিরাজের লড়াই: ১৯ রানের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানের উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেট জুটিতে সেই চাপ সামলে নেন মুশফিক ও মিরাজ। এ পর্যন্ত ৬৩ রান যোগ করেছেন দুজন।

মুশফিকের ষোড়শ হাফ-সেঞ্চুরি: সাকিব আল হাসানের পর মুশফিকুর রহিম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তবে সাকিবের চরিত্রের ঠিক উল্টো ছিলেন মুশফিক। ২২ গজের ক্রিজে ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিয়েছেন টাইগার দলপতি। ১৩৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ল্যান্ডমার্কে পৌঁছেছেন উইকেট রক্ষক এ ব্যাটসম্যান।


দ্বিতীয় সেশনও ভারতের: মধ্যাহ্ন বিরতির পর চা-বিরতির আগ পর্যন্ত ৩১ ওভারে ১২১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ওভারপ্রতি ৩.৯০ গড়ে রান করেছে বাংলাদেশ। তবে গুরুত্বপূর্ণ ২টি উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। সাকিব আল হাসান ৮২ ও সাব্বির রহমান ১৬ রানে নিজেদের উইকেট হারান। বাংলাদেশ দ্রুত রান তুললেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট তুলে প্রভাব বিস্তার করেছে।  

দ্রুত ফিরলেন সাব্বির: রবীন্দ্র জাদেজার বলে স্লগ সুইপ খেলতে গেলেন সাব্বির রহমান। বল মিস করলেন এ হার্ডহিটার। বল লাগল পিছনের পায়ে। রবীন্দ্র জাদেজা, ঋদ্ধিমান সাহা, আজিঙ্কা রাহানে, বিরাট কোহলি একসঙ্গে উইকেটের আবেদন করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার মারাইস এরাসমাসও আঙুল তুললেন। ৩৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬ রান করে সাজঘরে ফিরলেন সাব্বির।  
সাকিবের ‘আত্মাহুতি’: প্রথম বল থেকেই ‘কেয়ারলেস’ ব্যাটিং করছিলেন সাকিব। উমেশ যাদবের ফেস করা প্রথম বলটি অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু লিভ করার পরিবর্তে খোঁচা মারতে গেলেন সাকিব! এরপর এরকম অনেক শটই খেলেছেন, বেঁচেও গেছেন। কয়েকবার রানআউটের হাত থেকেও বেঁচেছেন। কিন্তু নিজের উইকেটের জন্য একটুও মায়া বাড়েনি তার। ৮২ রানে নিজের উইকেট আত্মাহুতি দিয়েছেন ‘কেয়ারলেস’ ক্রিকেট খেলেই। ভারতের বিপক্ষে পাওয়া প্রথম হাফ-সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলেন না সাকিব। অশ্বিনের বলে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে টার্নের বিপরীতে খেলতে গিয়ে মিড অনে যাদবের হাতে ক্যাচ দেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।



প্রতিরোধ: পঞ্চম উইকেটে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে প্রতিরোধ পায় বাংলাদেশ। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে ১০৭ রান যোগ করেন।
সাকিবের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরি: অশ্বিনের বলে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে কভার ড্রাইভ সাকিবের। ৪৬ থেকে সাকিব পৌঁছে গেলেন ৫০ রানে। ততক্ষণে বাংলাদেশের রান দেড়শ ছাড়াল। ৬৯ বলে ১০ বাউন্ডারিতে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছান বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার। এ ইনিংসের মধ্য দিয়ে তামিমকে ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব। তামিম টেস্টে ২০টি হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪টি হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন।
ভারতের সেশন: তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে ২৯ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত বোলিং দাপট দেখিয়েছে স্বাগতিক বোলাররা। সাকিব আল হাসান ২৯ ও মুশফিকুর রহিম ৬ রানে অপরাজিত থেকে বিরতিতে গেছেন। বাংলাদেশ এখনও ৫৬২ রানে পিছিয়ে।



বোলিংয়ে এসেই দলকে সাফল্য এনে দিলেন ইশান্ত শর্মা। তার বলে এলবিডাব্লিউ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫৭ বলে ২৮ রান করেছেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিভিউ নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বাঁচতে পারেননি!  
বল মিস করলেন মুমিনুল: উমেশ যাদবের সোজা বল। শরীর সোজা রেখে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু যাদবের দ্রুত গতির বল মিস করলেন মুমিনুল। এলবিডাব্লিউ হয়ে ১২ রানে সাজঘরে ফিরলেন মুমিনুল।
রানআউট তামিম: তৃতীয় দিনের সকালের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হল বাংলাদেশের। যেখানে ভারতের রান পাহাড় তাড়া করতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করা উচিত বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের, সেখান দিনের তৃতীয় ওভারেই রানআউট হয়ে উইকেট দিয়ে আসলেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। ভুবনেশ্বর কুমারের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ব্যক্তিগত ২৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম।
ফলো অন: ভারতের বিপক্ষে ফলো অন এড়াতে হলে ৪৮৭ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ৪০০। ২০০০ সালে ঢাকায় অভিষেক টেস্টেই এ রান করেছিল বাংলাদেশ। অর্থ্যাৎ ফলো অন এড়াতে রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে।

খেলতে হবে বড় ইনিংস:  তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তারা বড় ইনিংস খেলতে পারলেই জবাব দিতে পারবে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: