বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘শহিদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী:
একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ আবুল মনসুর।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহিদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র ও সংস্কৃতি এবং
মানবাধিকারকর্মী জনাব আসিফ মুনীর। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা
বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ কামরুজ্জামান।
সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার ড. শিহাব শাহরিয়ার।
সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্যসমালোচক শহিদ
অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে
এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি খুলনার ব্রজলাল কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সহযোগী
আল-বদর বাহিনী তাঁকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং সম্ভবত ঐদিনই তাঁকে হত্যা করে।
বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, অসম্ভব মেধাবী মুনীর চৌধুরী হাজার বছর বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে। মূল
প্রবন্ধ উপস্থাপনে জনাব আসিফ মুনীর বলেন, মুনীর চৌধুরীর সবচেয়ে বেশি সফলতা আধুনিক বাংলা
নাটকের জনক হিসেবে। শিক্ষক হিসেবেও অনবদ্য সাফল্যের কথা শোনা যায় তাঁর সমসাময়িক বন্ধু-
ছাত্র-গুণমুগ্ধদের কাছ থেকে। কৈশোর থেকে পরিণত বয়স এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের আগে পর্যন্ত
দেশী-বিদেশী গদ্য সাহিত্য, নাটক, বাংলা ভাষা, ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পাঠ ছিল মুনীর চৌধুরীর নেশা।
শ্রেণীকক্ষে তাঁর পাঠদান এবং রাজনৈতিক, সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তৃতা গুলি মনোমুগ্ধকর
ছিল। কৈশোর থেকে পরিণত বয়স এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের আগে পর্যন্ত দেশী-বিদেশী গদ্য
সাহিত্য, নাটক, বাংলা ভাষা, ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পাঠ ছিল মুনীর চৌধুরীর নেশা। বাংলা ও ইংরেজী সাহিত্যের
প্রচুর পড়াশোনা থাকায় এই দুই ভাষাতেই তাঁর শব্দের ভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। তাঁর পাঠদানের
মধ্যে তিনি বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সাহিত্যের উদাহারন টেনে আনতেন এবং অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায়
পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতেন। অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন, অন্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও
মন্ত্রমুগ্ধের মত এই জীবন্ত কিংবদন্তির ক্লাস শুনতে আসতেন। তিনি তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে বাঙালি
সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষা চর্চার শিক্ষা দিয়ে গেলেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। ব
িভিন্ন প্রজন্মের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য এরকম বিরল দৃষ্টান্তের মত অনুপ্রেরণা আর কি হতে পারে। আলোচনায়
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, অসম্ভব মেধাবী মুনীর চৌধুরী হাজার
বছর বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে। তাঁর জ্ঞানর্জনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়।
বাংলাদেশের অভূতপূর্ব প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মধ্যে মুনীর চৌধুরী অন্যতম। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে
জনাব মোঃ আবুল মনসুর বলেন, মুনীর চৌধুরী এমন একজন প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন যিনি বাংলা ভাষা
আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। শুনেছি তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের পাঠদান ক্লাসে ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষক।
গুণিজনেরা বেঁচে থাকেন তাদের রেখে যাওয়া কাজের মধ্যে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আ আ ম স
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শহিদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী খুব সংক্ষিপ্ত জীবনে অনেক কিছু অর্জন
করেছেন। বাংলা টাইপ রাইটার মেশিনের প্রচলন তাঁর মাধ্যমেই শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাকে মেধাশূন্য
করার লক্ষ্যে মুনীর চৌধুরীর মতো বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি
জাতি তার এই বীর সন্তানদের স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।
রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২
Author: Swadeshsomoy24.com
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 coment rios: