সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চের অভিষেক

খাদ্য মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) প্রতিষ্ঠিত হয়। সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান, দারিদ্র্যতা ও পুষ্টিহীনতা দূর করার মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ঋঅঙ তার কার্যক্রম শুরু করে।
বিশ্বে সকল মানুষের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশ নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সকল খাদ্য উপাদান যেমন- খাদ্যশস্য, মাছ, প্রাণিজ আমিষ, ফলমূল উৎপাদনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের পরিক্রমায় কৃষি ব্যবস্থাপনা ও মানুষের খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তাইতো এখন বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রমবর্ধমান বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ষাটের দশকের গোড়ায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী সবুজ বিপ্লব ঘটে। যার ফলে কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়েছে। এ ছাড়াও পৃথিবীব্যাপী অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন ও ক্রমাগত যুদ্ধ, বিগ্রহ বেড়েই চলেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর এবং মানুষ প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত চাষাবাদের ফলে মাটির উর্বরতা ক্রমশ বিনষ্ট হচ্ছে। ইটভাটা, ঘরবাড়ি তৈরিতে উপরিস্তরের মাটি অপসারণ করার ফলে মাটির গুণাগুণ ক্রমশ বিনষ্ট হচ্ছে। মাটির জীববৈচিত্র্য হলো ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কেঁচো ও মাটির মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন উপকারী জীব। উপরিস্তরের এক চা চামচ মাটিতে বহু প্রজাতির প্রায় ৬ বিলিয়নের বেশি অণুজীব থাকতে পারে। মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ পরিবেশ ও কৃষিশিল্প উভয়ের জন্যই প্রয়োজন। এ জন্য আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবারের পাশাপাশি আমিষ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার যেমন- দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফলমূল ও শাক-সবজি রাখতে হবে। আমাদের দেশের প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনা বা ছাদ হতে পারে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রধান উৎস। পরিকল্পনা মোতাবেক বসতবাড়ির বিভিন্ন জায়গায় মৌসুম ও প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন শাক-সবজি যেমন: শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালংশাক, পেঁয়াজ, টমেটো, লেটুস এবং গরমকালে ও বর্ষাকালে পুঁইশাক, ঢেঁড়স, ডাঁটা, লালশাক ও কচু এবং বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমি ফল যেমন- আম, জাম, মালটা, লেবু, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, কলা ও ঔষধি গাছ যেমন- বাসক, থানকুনি, তুলসী, পুদিনা চাষাবাদ করা যেতে পারে। নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির জন্য শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদনে জৈব সার, ভার্মিকম্পোস্ট ও সবুজ সার এবং বালাই দমনে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) অনুসরণ করতে হবে। এর ফলে পরিবেশের ওপরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না এবং খাদ্য গ্রহণে কোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকবে না। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বসতবাড়িতে গবাদিপশু যেমন- গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন এবং পুকুরে মাছ চাষ করা যেতে পারে। উপরোক্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পারিবারিক নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। সময় এসেছে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন জোরদার করার মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। সমগ্র বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার মাধ্যমে নিরাপদ ও বাসযোগ্য আগামী গড়তে সময়োপযোগী ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সকলকে সম্মিলিতভাবে ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য যেমন সবার জন্য প্রয়োজন, তেমনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। নিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা জানান বাংলাদেশের জনগণের সংবিধানসিদ্ধ মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। কিন্তু সেই খাদ্যে অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফেন মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে কীটনাশক, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল নামের নীরব ঘাতক বিষ মিশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি রয়েছে। সহজপ্রাপ্যতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা এবং যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটছে। একই সাথে বাড়ছে রোগের প্রাদুর্ভাব। এদেশের প্রতিটি নাগরিকের বিষমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নাগরিকরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই আমাদের এই আন্দলন। বনিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চে প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বলেন রিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পরিচালিত আমাদের এই কার্যক্রম। জনস্বার্থে সারা দেশে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের সচেতন ভোক্তাদের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ জানাবো।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: