বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

বাংলাদেশ শীঘ্রই জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ সংশ্লিষ্ট ‘হংকং কনভেনশন’ অনুমোদন করবে ---- শিল্পমন্ত্রী

 স্বদেশসময়২৪.কম: মিজানুর রহমান জুয়েলঃ  ঢাকা, ১১ মে ২৩

ঢাকা, ২৬ বৈশাখ (১০ মে ২০২৩): শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এম.পি বলেছেন, বাংলাদেশ ২০২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা প্রবর্তিত দি হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি সেফ এন্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস, ২০০৯ (দি হংকং কনভেনশন) অনুমোদন করবে মন্ত্রী বলেন, জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বাংলাদেশ পরিবেশগত, পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারা, বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা এবং দেশে-বিদেশে নানা নেতিবাচক প্রচারের কারণে জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ সেক্টর বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমকেশিল্পহিসেবে ঘোষণা করেন শিল্প মন্ত্রণালয় জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পরিচালনা, উন্নয়ন বিকাশের অংশ হিসেবে ২০১১ সালেশীপ ব্রেকিং এন্ড শীপ রিসাইক্লিং রুলস্জারি করে এবং ২০১৮ সালেবাংলাদেশ জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ আইনপ্রণয়ন করে মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাপারে তিনি নরওয়ের সহযোগিতা কামনা করেন আজ ঢাকার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নরওয়ের জলবায়ু পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী মিস রাগনহিল্ড সজোনার সিরস্টাড (Ms Ragnhild Sjoner Syrstad) এর নেতৃত্বে এর প্রতিনিধিদলের সাথে এক দ্বিপাক্ষিক সভায় মন্ত্রী একথা বলেন প্রতিনিধিদলে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন ইকটার-সেভেনডসেন (Mr Espen ikter-Svendsen), নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং নরওয়ের জাহাজ মালিক সমিটির নেতৃবৃন্দ এতে অন্যদের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, অতিরিক্তি সচিব মো: জাফর উল্লাহ শেখ ফয়েজুল আমীন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন নরওয়ের উপমন্ত্রী রাগনহিল্ড সজোনার সিরস্টাডহংকং কনভেনশনঅনুমোদনে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কনভেনশন অনুমোদনের ফলে জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাবে নরওয়ে একটি জাহাজ নির্মাণকারী জাতি মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় নরওয়েতে প্রচুর জাহাজ রিসাইক্লিং এর অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশী ইয়ার্ডগুলি সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে এজন্য পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে তিনি আরও বলেন, ‘দি হংকং কনভেনশন২০২৩ সালের মধ্যে অনুমোদন করা হলে বাংলাদেশ আরও দুই বছর সময় পাবে সংক্রান্ত শর্তগুলি প্রতিপালন করার জন্য তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ে বিগত এক দশক ধরে সহযোগিতা করে আসছে ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে তিনি শিল্পের আধুনিকায়ন এবং সমুদ্র শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নরওয়ের কারিগরি প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ের সাথে দীর্ঘদিনের কারিগরি সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে আমরা গত মে তারিখে সংক্রান্ত একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি তিনি শিল্পের শ্রমিক জনবলের দক্ষতা বাড়াতে নরওয়ে থেকে প্রশিক্ষণ কারিগরি সহায়তা বাড়ানোর জন্য নরওয়ের উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উল্লেখ্য, জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রধান বাংলাদেশে ১৬৭টি জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ ইয়ার্ড রয়েছে যা চট্রগ্রামস্থ সীতাকুণ্ড উপজেলাতে অবস্থিত যাদের মধ্যে কার্যরত ইয়ার্ড হচ্ছে ৫০টি এদেশের বার্ষিক জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলি পৃথিবীর ৫২.% জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাত করে থাকে দেশের সামগ্রিক আয়রন চাহিদার ৬০%-৭০% আসে জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ শিল্প হতে তিনি আরো বলেন যে, শিল্পে প্রায় ৩০,০০০ (ত্রিশ) হাজার হতে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ) হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছে এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অন্যদিকে এদেশের ৬০০ এর মতো রি-রোলিং স্টিল মিল রয়েছে, যেগুলি এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল বিশ্বের যে পাঁচটি দেশ সবচেয়ে বেশী জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াকরণ করে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরেহংকং কনভেনশন২০০৯ সালে ৬৩টি দেশের কূটনৈতিক সম্মেলনে পাশ হয়েছিল International Maritime Organization (IMO) এবং সদস্য রাষ্ট্র বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা Basel Convention এর পক্ষগণের সহায়তায়হংকং কনভেনশনপাশ করা হয় হংকং কনভেনশনের উদ্দেশ্য হলো জাহাজগুলি বিভাজনের সময় পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করাহংকং কনভেনশনকার্যকর করার জন্য ইতোমধ্যে যে বিশটি দেশ অনুসমর্থন করেছে সেদেশগুলি হলো: বেলজিয়াম, দি রিপাবলিক অফ দ্যা কঙ্গো, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ঘানা, ভারত, জাপান, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পানামা, সায়াতোমি এন্ড প্রিনসিপ, সার্বিয়া, স্পেন তুরস্ক এবং পর্তুগাল বছর হংকং কনভেনশন কার্যকর হলে ইয়ার্ডগুলোকে HKC Compliance ইয়ার্ড হতে হবে সেক্ষেত্রে ইয়ার্ডগুলিতে কনক্রিটের তৈরি অভেদ্য মেঝে থাকতে হবে, সুন্দর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা থাকতে হবে জাহাজ কাটিং জোন স্ট্যাকিং জোন সুন্দরভাবে মার্ক করতে হবে, মেডিকেল চিকিৎসার ব্যবস্থা ট্রেনিং প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: