রবিবার, ৭ মে, ২০২৩

‘গাছ কাটলে আমরা অক্সিজেন পাব না, ফুল পাব না, পাখিও পাব না

 স্বদেশসময়২৪.কম:

[শনিবার ০৬ মে, ২০২৩ ‘গাছ কাটা নিষেধ- আদেশক্রমে নগরবাসী’

এলাকাবাসীর প্রতিবাদ-আপত্তির পরও রাজধানীর ধানমণ্ডির সাত মসজিদ সড়কে গাছ কাটা থেমে নেই। গত জানুয়ারিতে নতুন সড়ক বিভাজক বানাতে গিয়ে গাছ কাটা শুরু হয়। এরপর গাছকাটা বন্ধ হলেও নতুন করে গত সপ্তাহে আবার শুরু হয়। তারপর টানা দুদিন আন্দোলনের মুখে গাছ কাটা বন্ধ থাকলেও গত শুক্রবার গভীর রাতে বেশ কয়েকটি গাছে আবারও পড়ে কোপ। এর প্রতিবাদে শনিবার রাতে ফের আন্দোলনে নামেন এলাকাবাসী। সেই কর্মসূচিত অংশ নেন পরিবেশবিদরাও। সবগুলো ব্যানার ও ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘গাছ কাটা নিষেধ- আদেশক্রমে নগরবাসী’।

মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নারী নেত্রী শিরিন পি হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গবেষক পাভেল পার্থ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর নির্বাহী পরিচালক এম জাকির হোসেন খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সদস্য ইবনুল সাঈদ রানা, সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা নজির আমিন চৌধুরী জয়, গ্রীন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর সমন্বয়কারী নাহিদ হোসেন,  স্থানীয় বাসিন্দা আদ্রিতা ও নালন্দা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সিমল ধুলি।

বক্তারা বলেন, সাত মসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কাটার জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার বাহিনীর তৎপর। ইতোমধ্যে ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে আবহানী মাঠ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। আন্দোলনেও বন্ধ হয়নি গাছ কাটা। বাকি গাছ রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু দিনের আলোর বদলে সিটি করপোরেশন গাছগুলো কাটার জন্য রাতের অন্ধকার বেছে নিয়েছে। একটি দেশের নগর কর্তৃপক্ষ তার নাগরিকদের চোখে ধুলা দিতে এভাবে রাতের আঁধার বেছে নিতে পারে না। ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের স্বার্থে এই বৃক্ষনিধন শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসে কিছু তরুণ সংগঠক ‘সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন’-এর ব্যানারে এর বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি তোলেন।

 সে যাত্রায় ঠিকাদার গাছ কাটার কাজে বিরতি দিলেও গত ৩০ এপ্রিল রাতে আবার শুরু হয় বৃক্ষনিধন এবং আবারও ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু গত শুক্রবার গভীর রাতে আবারও শুরু হয় গাছ কাটা। আর এর প্রতিবাদে শনিবার রাস্তায় নেমে আসেন এলকাবাসী।

মানবন্ধনে সুলতানা কামাল বলেন, উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বিবেকহীন কাজ। নগরের শিশুসহ সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছ। তাপমাত্রায় ঢাকা আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জলাশয় ভরাট ও গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। গাছ কাটার কারণে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে শহর। এটা যারা করে, যাদের নির্দেশে করে, তাদের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। আজ মেয়রের কাছে আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন অবিলম্বে এই গাছ কাটা বন্ধের পরামর্শ দেন, তিনি যেন আমাদের সঙ্গে, পরিবেশবিদদের সঙ্গে বসেন।

মানবন্ধনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গাছ রোপণের সময় বাজেট, আবার কাটার জন্য বাজেট– এ ধরনের টালবাহানা করে জনগণের করের টাকার অপব্যবহার করা যাবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সভ্য সমাজে চলতে পারে না। বারবার জনমত উপেক্ষা করে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা হিতে বিপরীত হয়।

নালন্দা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সিমল ধুলি বলেন, ‘গাছ কাটলে আমরা অক্সিজেন পাব না, ফুল পাব না, পাখিও পাব না।’মানববন্ধন শেষে সড়কের মাঝে বৃক্ষরোপণ করেন আয়োজকরা। পাশাপাশি গাছ কাটতে আসা সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারের ভেকু যন্ত্রে ‘গাছ কাটা নিষেধ- আদেশক্রমে নগরবাসী’ লিখে দেন আন্দোলনকারীরা। আগামীকাল রোববারও বিকেল ৫টায় একইরকম কর্মসূচি পালন করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দেবেন বলেও জানান তারা।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: