প্রাণ, প্রকৃতি এবং জলবায়ু নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং সহপ্রতিষ্ঠান গ্রীনফিনিটির যৌথ পরিচালনায় ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে বিকাল ৩ ঘটিকায় রাজধানীর সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তন এ “প্রকৃতি সুরক্ষায় নৌ পর্যটন এর সম্ভাবনা” শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।
সভায় নদী ও জলাশয় কেন্দ্রিক কর্মরত পরিবেশ, পর্যটন, মিডিয়া এবং ট্যুর আপরেটর সংগঠন গুলোর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি কর্ণধারবৃন্দ অংশ নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর সিইও এবং এমডি জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জনাব এম জাকির হোসেন খান। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং পলিসি রিসার্স সেন্টার এর প্রধান নির্বাহী জনাব মাহফুজুল হক। ।
বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন বিজিএমইএ ফ্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল; মুখলেসুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন ; সেলিমা জাহান, সাবেক মেম্বার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং অতিরিক্ত সচিব শ্রেডা; মো. মনির হোসেন চৌধুরী, পরিচালক, এনভায়রনমেন্ট রির্সাচ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ; জনাব শমশের আলী, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষজ্ঞ।
জনাব এম জাকির হোসেন খান এর সঞ্চালনায় নৌ পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা-সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর ট্যুরিজম এ্যন্ড হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষকমন্ডলী, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন, বেসরকারী ট্যুর অপারেটর, পর্যটন সংস্থাপ্রধান, নদী গবেষক, পরিবেশ আন্দোলনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সংবাদ মাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং মিডিয়ার ব্যক্তিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, কথা বলেছেন এবং মতামত দিয়েছেন।
সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসাবে ছিলেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ এর অতিরিক্তি পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, রিভার এ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জনাব ড. আব্দুল ওহাব।
রিভার ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মুনির হোসেন বলেন, নদী পানি প্রকৃতি রক্ষা করেই ট্যুরিজম করতে হবে। ইভেন্ট আর ট্যুরিজম এক কথা নয়। ইভেন্ট করতে অনেক সময়ই প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা হয় না। নদী বিষয়ে কাজ করা সংগঠন নোঙর এর চেয়ারম্যান সামস সুমন। বক্তব্য রাখেন ইকো মেরিন এর নির্বাহী জনাব ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রিভার বাংলার চেয়ারম্যান নদী লেখক ফয়সাল আহমেদ, মোহাম্মদ তারেকুর রহমান উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও ছিলেন আশিষ কুমার দে , সভাপতি শিপিং এ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোটারস ফোরাম; জাহাঙ্গীর বাবু, সভাপতি ট্যুরিজম এজেন্সি; আমিনুর রসুল , উন্নয়নধারা ট্রাস্ট; প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিকার ফোরাম এর মহাসচিব আনোয়ারুল হক। তরুণদের হয়ে কথা বলেন ইয়ুথ লিডার সোহানুর রহমান সোহান, আমানউল্লাহ পরাগ, আল মামুন রাকিব।
বক্তারা বলেন বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এ দেশে নদীকেন্দিক যোগাযোগ এবং পরিবহন ও র্পযটন এর সম্ভাবনা অপরিসীম। আমাদের সময় এসেছে নদী জলাশয় হাওর, বাওর, বিলসহ প্রাণ প্রকৃ্তির অন্যতম কেন্দ্র জলাশয় কেন্দ্রিক র্পযটনকে উৎসাহতি করা। বিলুপ্তিপ্রায় নদ নদী উদ্ধার ও ব্যবহারযোগ্য করা, দখল দূষণ এর জন্য আইনি প্রক্রিয়া র্কাযকর করার সুপারিশ করা হয়।
জনাব মোখলেসুর রহমান বলেন আমাদের রয়েছে শত শত নদী, অসংখ্য হাওর, বাওর, বিল, ঝিল রয়েছে, যা প্রকৃতি সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা যোগাযোগ এবং পর্যটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও নদ- নদী কেন্দ্রিক যোগাযোগের উন্নয়ন এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গ্রীনফিনিটি আজ বাংলাদেশের নৌ -পর্যটন এর গুরুত্ব অনুধাবন করে যে আয়োজন করছে তা আসলেই তাৎপর্যপুর্ন এবং বিবেচনার দাবি রাখে।
বক্তারা নৌ পর্যটনকে উৎসাহিত করণে সরকারের আশু পদক্ষেপের আহবান জানান। তারা বলেন দেশে নৌ পর্যটন বিকশিত হলে হাজার হাজার বেকার এর কর্মসংস্থান হবে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রশিক্ষিত হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে। বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট হবে ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেণ আয়োজন সংগঠন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর সহ প্রতিষ্ঠান গ্রীনফিনিটি টীম এর তন্ময় সাহা, সোহান আহমেদ এবং মোস্তাকিমা রহমান বিনীতা।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ বলেনঃ বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন ও অন্যান্য সুবিধাদি সম্পন্ন করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নদী কেন্দ্রিক প্রকৃতি ও নৃতাত্তি¡ক ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজমকে এখনই সময় প্রধান্য দেয়ার।
বাংলাদেশের সকল নদীকে সহজ গমনাগমনের জন্য বাস্তব অবকাঠামোতে নৌপথ তৈরীতে সরকারকে সম্পৃক্ত করা এবং বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা।জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশ সম্মত জ্বালানী ব্যবহার উপযুক্ত নৌযান নির্মাণে উৎসাহ যোগান দিতে হবে। নৌ কেন্দ্রিক ভ্রমণ বিনোদন যোগাযোগ এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহ যোগান খুবই জরুরী। নৌ পর্যটন সম্প্রসারণ হলে এ শিল্পে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য নতুন মাত্রা তৈরী করবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটকদের জন্য ভিসা ও ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সহজতর করার উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর কমিউনিটি অংশগ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করবে।
নদী ও জলাশয় রক্ষায় যারা গবেষণা আইন এবং নদী জলাশয় সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন এবং সামাজিক সচেতনতায় কাজ করছে তারা বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথিবৃন্দ বলেন আমাদের নদীগুলো রক্ষা করতে হবে। নদীতীরবর্তী জনগোষ্ঠী এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। নৌ পর্যটন ব্যাপকতা পেলে দেশে যেমন কর্মসংস্থান তৈরী হবে তেমনি আমাদের দেশের দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পর্যটন শিল্পে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে বৈদেশিক আয় নিশ্চিত করবে। এরই মাধ্যমে আমাদের চারু কারু শিল্প উপাদানসমূহের বিপণন বৃদ্ধি, নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি, দারিদ্য্র দূরীকরণ ও সামাজিক স¤প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গ্রীনফিনিটির চীফ অপারেটিং অফিসার ড. দিলরুবা বেদেনা।
0 coment rios: